শরীর ও স্বাস্থ্য

আপনার মস্তিষ্ক তীক্ষ্ণ রাখার ৫ টি সহজ উপায়

নতুন বছরের শুরু । মানুষ নতুন কর্মউদ্যোগ নিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করেছে। কিভাবে নতুন নতুন কর্ম নিয়ে নিয়ে জীবন আরও সুন্দর করে তোলা যায়।
কিন্তু কিভাবে শুরু করবেন, কি কি বাধা আসতে পারে সেগুলো নিয়ে ভাবার বিষয়। আপনার অনেক পছন্দের অভ্যাস ত্যাগ করতে হতে পারে আপনাকে।
সবকিছু আপনাকে ভাবতে হবে, তার জন্য আপনাকে ব্যাবহার করতে হবে আপনার মস্তিষ্ক। আমরা কিভাবে কাজ করি, কিভাবে অনুভব করি এবং আমাদের চারপাশের সমস্ত তথ্য কিভাবে মাথার মধ্যে রাখি, তার একটা প্রভাব শরীরের ওপরও পড়ে।

ডাঃ সঞ্জয় গুপ্তার একটি বই থেকে জানা যায় মানুষের মস্তিষ্ক তিনটি ভাগে ভাগ করা। সংগঠিত মস্তিষ্ক, মেনপজকালিন মস্তিষ্ক এবং বিষণ্ণ মস্তিষ্ক।
এই নতুন বছরে সবাইকে তীক্ষ্ণ ও ফোকাস রাখতে সাহায্য করার জন্য পাঁচটি শীর্ষ মস্তিষ্কের টিপস নিয়ে আলোচনা করা হল।

১। মস্তিষ্ক কে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিন

পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাওয়া সামগ্রিক ভাল স্বাস্থ্যর পাশাপাশি ভাল মস্তিষ্কের জন্যও অপরিহার্য। কিন্তু আপনি জানেন কি করলে সেটা যথেষ্ট হবে?

একটি সুস্থ মস্তিষ্কের জন্য প্রতিদিন ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। ডাঃ গারফিল্ড বলেছিলেন যদি এর কাছাকাছি ঘুমও যদি হয় এবং সেটা যদি ভাল মানের ঘুম হয় তাহলেও এটি আপনার মস্তিষ্ক কে পূরণ করতে সাহায্য করবে।

দিনের বেলায় যদি আপনি কম সময়ের জন্য একটা ঘুম দেন, তাহলে সেটা আপনার মস্তিষ্কের জন্য ভাল হতে পারে। ডাঃ গারফিল্ডের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত ঘুমান, তাদের মস্তিষ্কের আয়তন অন্যদের থেকে বড়।

ডাঃ গারফিল্ড দুটো কথা বলেছিলেন ঃ ঘুমাতে যান এবং প্রতিদিন একই সময় ঘুম থেকে উঠুন। আপনার মস্তিষ্ক কে আনপ্লাগ করুন – যদি আপনি জেগে থাকেন, তাহলে অন্য কন কাজে ব্যাস্ত থাকুন যেমন হাঁটাহাঁটি করা, বন্ধুর সাথে গল্প আড্ডা করা।

২। আপনার মস্তিষ্ক কে পুষ্ট করুন

আপনার মস্তিষ্ক যাতে ভালোভাবে কাজ করে, তার জন্য খাবারের প্রয়োজন, কিন্তু সেই উৎস বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।

আপনি যদি চান, তাহলে সত্যই আপনি আপনার মস্তিষ্ক কে তীক্ষ্ণ করতে পারবেন। আপনার পছন্দের খাবার দিকে একবার খেয়াল করুন এবং তার স্বাস্থ্যকর সংস্করণ গুলি।

অনির্বাণ, যিনি একজন পেশাদার শেফ এবং একজন লেখক। তিনি একবার বলেছিলেন “আমরা এমন জায়গায় নেই যেখানে আমি বলতে পারি, আপনার মেজাজ উন্নত করার জন্য কিছু ব্লুবেরি খান।” তবে তিনি বলেছিলেন বৈজ্ঞানিক প্রমানিত কিছু খাবার আছে জা আপনার মেজাজ উন্নত করতে সাহায্য করে।

আপনি কিছু শাক সবজি খেতে পারেন যেমন তার মধ্যে একটা হল পালং শাক। এই শাকে কিছু নিম্ন ফোলেট থাকে যেগুলো মস্তিষ্ক তীক্ষ্ণ করতে সাহায্য করে।

অন্যান্য মেজাজ বৃদ্ধিকারী খাবার অনেক আছে। তার মধ্যে অনির্বাণের অন্যতম পছন্দ হল ডার্ক চকলেট।

আমরা একটা সমীক্ষা থেকে জানতে পারি যে আপনি যদি অতিরিক্ত গাড় প্রাকৃতিক চকলেট খান, তাহলে সেটা অন্য খাবারের থেকে ১২০০০ গুন বেশি কাজ করে মানুষের বিষণ্ণতা উন্নত করার জন্য। এত সেরোটোনিন, ম্যাগনেসিয়াম এবং কিছু ফাইবার থাকে।

অনির্বাণ সঙ্গে কিছু মাছের কথা বলেন যেগুলো তে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আছে, যেমন স্যামন, ম্যাকরেল, আঙ্কভিস। এর সাথে তিনি দই, বাদাম এবং চিয়া জাতীয় বীজের মত গাঁজানো খাবারের পরামর্শ দেন।

৩। ক্যাফিনেট- তবে অল্প পরিমানে

ক্যাফিন পৃথিবীর সর্বাধিক ব্যাবহার হওয়া সাইকো একটিভ ড্রাগগুলির মধ্যে একটা। এতে প্রচুর উপকারিতা রয়েছে। কিন্তু অল্প পরিমানে নেওয়া ভাল। বেশীমাত্রায় নিলে ক্ষতির সম্বাবনা।

বিজ্ঞান লেখক মাইকেল পোলান বলেছেন, “কফি এবং চায়ের মত ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়গুলির স্বাস্থ্যর জন্য অনেক ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। তারা অনেক রোগের চিকিৎসায় সাহায্য করে। “

ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়গুলি আপনাকে ভাল বোধ করতে পারে। আপনাকে ঘুম থেকে উঠতে সাহায্য করে এবং আপনাকে কাজে ফোকাস করতে সাহায্য করে।

কিন্তু পোলান বলেছেন আপনাকে অনেক ভেবে চিনতে চা বা কফি সেবন করতে হবে, কতটা পরিমান আপনি সেবন করছেন তার অপর নির্ভর করবে আপনার ঘুমের সময়। আপনার ঘুমের সঙ্গে এটি খুব সম্পর্কযুক্ত।

৪। চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিন

সারাদিন বিভিন্ন খবরের চানেলে বিভিন্ন চাপের ঘটনাগুলি তুলে ধরা হয়, তার সাথে সোশ্যাল মিডিয়াতে সেই খবরগুলি চলতে থাকে। এগুলি মানুষের আবেগ কে কঠিন করে তোলে।

ডাঃ গেইল বলেছেন ” আমি উদ্বিগ্ন যে বিশ্বতে আমরা বসবাস করছি, আমরা এই জিনিসগুলি ব্যাবহার করার সময় মানসিক স্বাস্থ্য কে গুরুত্ব দিচ্ছি না।” সঙ্গে আরও বলেন তিনি সোশ্যাল মিডিয়াতে স্ক্রোল করার পক্ষে নয়। যেখানে কোন সতর্কতা নেই, এটি সত্যিই বিরক্তিকর।

ডাঃ সল্টজ বলেছেন আপনি এক থেকে পাঁচ গননা করুন এবং নাক দিয়ে শ্বাস নিন। তারপর আপনি আপনার মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়বেন ধীরে ধীরে এক থেকে সাত গননা করতে করতে। একটু শ্বাস নেবার চেয়ে একটু বেশি শ্বাস ছাড়ুন। তার কারন তিনি বলেন দীর্ঘ অতিরিক্ত শ্বাস ছাড়লে হৃদস্পন্দন কিছুটা কম হয় আর উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে।

৫-১০ মিনিটের জন্য এরকম শ্বাস প্রশ্বাস করা শরীরের জন্য ভাল এবং আপনাকে মনস্তাত্তিক ভাবে আপনাকে শিথিল করবে।

৫। কাউকে ক্ষমা করার কথা ভাবুন।

কাউকে ক্ষমা করা, হতে পারে অপরিচিত কাউকে বা কোন বন্ধুকে বা নিজেকে- তাতে বিষণ্ণতা কমবে, রক্তচাপ কম হবে এবং ভাল ঘুমসহ অনেকগুলি শারীরিক ও মানসিক উপকার হবে।

ক্ষমা মূলত একটি নৈতিক গুন ঃ যারা আপনার সঙ্গে ভাল কাজ করেনি, অন্যায় করেছে, তাদের প্রতি একটা করুণাময়ী প্রতিক্রিয়া মাত্র।

অলাভজনক আন্তর্জাতিক ক্ষমা প্রতিষ্ঠানের এক প্রতিষ্ঠাতা বলেছেন, ক্ষমা করা একটা অভ্যাস আর এটার জন্য সময় লাগে।

তিনি আরও বলেন, প্রথমে কোন বড় সমস্যা দিয়ে শুরু করবেন না । প্রথমে চেষ্টা করুন ছোট ছোট ঘটনার প্রেক্ষিতে ক্ষমা করতে। আস্তে আস্তে বড় সমস্যা গুলো ক্ষমা করতে পারবেন।

তিনি আরও বলেছেন, আপনি যখন কোন সমস্যায় আটকে থাকবেন এবং দুশ্চিন্তায় থাকবেন, তখন ক্ষমা বিবেচনা করা উপযুক্ত হতে পারে।

প্রতিবেদন – প্রভা গাঙ্গুলী

আরও পড়ুন – ভারতের ভাস্কর্যের অন্যতম আকর্ষণ জলকাণ্ডেশ্বরের প্রাচীন মন্দির

আমাদের ফেসবুক ঃ https://www.facebook.com/somoyasomoy.co