শরীর ও স্বাস্থ্য

Health : হার্ট ভালো রাখতে নবরত্ন ডালের ভূমিকা

নবরত্ন ডালের ছয়টি উপকারিতার বিবরণ নিচে দেওয়া হল। আসুন জেনে নি কি কি উপকারিতা রয়েছে।

১। শরীরের মেদ কমাতে

সবাই চায় এখন চর্বি ঝরাতে। এটার জন্য অনেক কিছু করতেই মানুষ প্রস্তুত। তাছারা ওজন বাড়লে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। তাই ওজন কমাতে হলে কেবল খাওয়া বন্ধ করে দিলেই চলবে না। তার জন্য প্রয়োজন ঠিকমতো ডায়েটেরও। নবরত্ন ডাল সামান্য খেলেই পেট ভরে যায়। তাই ডালিয়া বানাতে পারেন
নবরত্ন ডাল দিয়ে। কিংবা ডাল দিয়ে রুটিও খেতে পারেন।নবরত্ন ডাল আর নবরত্ন ডালের মধ্যে ফাইবার থাকায় পেটও পরিষ্কার হয়।

২। ভালো থাকে হার্ট

নবরত্ন ডালে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা হার্টকে সুস্থ রাখে। এছাড়াও ধমনীর মধ্যে দিয়ে যাতে রক্তচলাচল ভালো হয় সেদিকেও খেয়াল রাখে। নবরত্ন ডালে থাকে ফোলেট, ম্যাগনেশিয়াম। যা রক্তকে জমাট বাঁধা থেকে রক্ষা করে। হার্ট অ্যাটার্কের আশঙ্কা কমে।

৩। কোলেস্টরল কম করে

যাঁদের কোলেস্টেরল রয়েছে তাঁরা মুসুর ডালের পরিবর্তে নবরত্ন ডাল খেতে পারেন। নবরত্ন ডাল শরীরের অতিরিক্ত টক্সিন দূর করে দেয়। ফলে কোলেস্টেরল জমতে বাধা দেয়।

৪। ডায়াবিটিসের জন্য ভালো

নবরত্ন ডাল যে-কোনও ধরনের কার্বোহাইড্রেট হজম করায় ধীরে-ধীরে, ফলে চোখের খিদে হয় না। এছাড়া বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন যদি আধ কাপ করে ডালসেদ্ধ যায় তা হলে এক সপ্তাহের মধ্যে শরীরের বাড়তি ইনসুলিনের মাত্রা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

৫। আয়রনের ঘাটতি পূরণ

নবরত্ন ডালের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ আয়রন। যা আমাদের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়। সেই সঙ্গে ফুসফুসেও কোনও সংক্রমণে বাধা দেয়। আর কাজ করার শক্তি জোগায় শরীরকে। যে কারণে গর্ভবতী মহিলাদের নবরত্ন ডাল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

৬। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে

নবরত্ন ডালের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আর যেহেতু জিরে আদা দিয়েই নবরতন ডাল রান্না করা হয় তাই এই ডাল খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। ফলে শরীরে কখনই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ঘাটতি হয় না।

রূপচর্চাতেও ভূমিকা রয়েছে নবরত্ন ডালের। টকদই, হলুদ বাটা আর নবরত্ন ডাল বেটে একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারলে বেশ ভালো ফল পাবেন। প্রতিদিন স্নানের আগে লাগাতে পারলে তা প্রাকৃতিক স্ক্রাবারের কাজ করবে। প্যাক লাগিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে দিন।

নবরত্ন ডাল রান্নার পদ্ধতি

নবরত্ন কোর্মা বলুন বা নবরত্ন বিরিয়ানি অথবা নবরত্ন পোলাও আমরা কমবেশি সকলেই খেয়েছি। তবে আজ আপনাদের যেকোনো নিরামিষ দিনে জলখাবার বা রাতের খাবার এর জন্য ‘নবরত্ন ডাল’ র রেসিপি বলবো। কিভাবে বানাবেন…

উপকরণ

  • রাজমা–১/২ কাপের কম
  • ছোলার ডাল– ১/২ কাপ
  • খোসা সহ মুগ– ১/২ কাপ
  • খোসা সহ কলাই–১/২ কাপ
  • অড়হর ডাল–১/২ কাপ
  • পেয়াজ-২টি কুচানো
  • রসুন-২ কোয়া কুচানো
  • আদা-১ টুকরা কুচানো
  • টমেটো-১ টি বড় কুচানো
  • জিরা ধনে- ১চামচ করে
  • গরম মশলা-১/২ চামচ
  • আমচুর-১/২ চামচ
  • কসুরি মেথি-২চিমটি
  • ধনে পাতা-১চামচ কুচানো
  • মাখন-৩চামচ
  • নুন, চিনি-স্বাদ মতো
  • লঙ্কা কুচি ও গুড়ো-২চামচ

পদ্ধতি

নবরত্ন মানে সব রকমের ডাল ভিজিয়ে রাখতে হবে ৬ ঘন্টা,ডাল শুকনো কড়াইতে হাল্কা ভেজে নিয়ে ধুয়ে নিয়ে ও গরম জলে ভিজিয়ে রাখার আধ ঘন্টা পর ওই জল সহ 1/2 চা চামচ নুন দিয়ে কুকারে সেদ্ধ করতে হবে সব উপকরণ রেডি করতে হবে।

তারপর সেদ্ধ করে রাখা নবরত্নডাল দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ৮-১০ মিনিট রান্না করে ভেজে রাখা পনির ও কিছুটা গরম জল ও ২ চা চা চামচ চিনি, পরিমান মত লবণ, ঘি দেবেন একটু, তারপর কিছুক্ষণ রান্না করলেই নবরত্ন ডাল তৈরি।

বিভিন্ন ডালের উপকারিতা

মুগের ডাল

অন্তঃসত্ত্বা মেয়েদের জন্যও এই ডাল খুব উপকারী। কারণ এই ডালে অনেক বেশী পরিমাণে প্রোটিন, আয়রন আর ফাইবার রয়েছে।

মুসুর ডাল

মুসুর ডালের স্যুপের রোগ দূর করার যে অদ্ভুত ক্ষমতা আছে সে কথা তো ডাক্তাররাও বলে থাকেন। গলা, অন্ত্রের বিভিন্ন রোগকে টাটা যদি বলতে চান, তাহলে মুসুর ডালের পাতলা স্যুপ বানিয়ে খান। আর আপনার যদি হিমোগ্লোবিন কম থাকে?

মুসুর ডাল নিশ্চয়ই আপনাদের পছন্দের তালিকায় সবথেকে ওপরেই থাকবে। ডালের মধ্যে মুসুর ডালেই সবথেকে বেশী প্রোটিন থাকে। তাছাড়া মুসুর ডালে প্রচুর পরিমাণে ফাইবারও থাকে।

অড়হর ডাল

এই ডাল খাওয়া খুব লাভজনক। তাছাড়া এই গাছের পাতা যদি কোনও কাটা জায়গায় লাগান, তাহলে ঘা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে।

পশ্চিমবঙ্গের বাইরে আমাদের অতি পরিচিত অড়হর ডালকে কিন্তু তুর ডাল বলেই ডাকা হয়। অড়হর ডালে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন তো থাকেই। সেইসাথে থাকে আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড। যেমন মিথিওনিন, লাইসিন, ট্রিপটোফ্যান ইত্যাদি। তাছাড়া ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, পটাসিয়াম, সোডিয়ামও থাকে।

ছোলার ডাল

ডায়াবেটিসের রোগীদের যদি ছোলার ডাল খাওয়ানো যায়, তাহলে ফল মেলে। আর ছোলার ডালে কোলেস্টেরল কম পাওয়া যায়, ফলে কোলেস্টেরল কম করতে হলে ছোলার ডাল বেশী করে খান। আর অ্যানিমিয়ার ধাত থাকলেও ছোলার ডাল খান।

বিউলির ডাল

বিউলির ডালে প্রোটিন তো থাকেই, তাছাড়া পটাসিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি মিনারেলস আর থিয়ামিন, রাইবোফ্ল্যাভিন, নিয়াসিনও প্রচুর পরিমাণে থাকে। আপনার শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রাকে কম করতেও কিন্তু বিউলির ডাল জিন্দাবাদ!

ছবি – সংগৃহীত

প্রতিবেদন – নন্দিনী সরকার

আরও পড়ুন – নিজেকে সুন্দর ও সুস্থ রাখার গোপন ফর্মুলা

আমাদের ফেসবুক – https://www.facebook.com/somoyasomoy.co