শরীর ও স্বাস্থ্য

নিজেকে সুন্দর ও সুস্থ রাখার গোপন ফর্মুলা

slim beautiful woman doing sports in morning in park doing yoga on mat in colorful fitness outfit in nature, smiling happy healthy lifestyle, calm meditation, bicycle on background

অনেকের কাছে ভোরে ঘুম থেকে ওঠা কঠিন । দেরি হয়ে গেলে আবার ব্যাম করতে পারেন না। অঝথা পেটে মেদ বাড়ে।

এছাড়াও জীবনযাপন ওজনকেও প্রভাবিত করে। নিয়মিত ওয়ার্কআউট করা দরকার হয়ে যায়। কিন্তু সেটি আর হয়ে ওঠে না।

পেটের চর্বি বা ভুঁড়ি কমানোর জন্য খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনার পাশাপাশি ব্যায়ামও দরকার। আসুন জেনে নিই কীভাবে এটা কমানো যায়। মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার, উচ্চ শর্করাযুক্ত খাবার বাদ দিন, যেমন কোমল পানীয়, চিনিযুক্ত খাবার, কেক পেস্ট্রি, চকোলেট ইত্যাদি। আমিষজাতীয় খাবার, আঁশযুক্ত খাবার বেশি করে খান। সবুজ শাকসবজি, তাজা ফলমূল খেতে হবে বেশি করে। কায়িক পরিশ্রমের পরিমাণ বাড়ান। নিয়মিত হাঁটুন। এ ছাড়া পেটের চর্বি কমানোর জন্য নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম করতে হবে।

শরীরে মেদের পরিমাণ কত কি করে বুঝবেন ?

পাঁজরের খাঁচার নিচ থেকে হিপবোন বা কোমরের হাড় পর্যন্ত এলাকার ঠিক মধ্যভাগ একটি ফিতা দিয়ে মাপুন। ফিতাটা সোজা করে ধরে জোরে শ্বাস ছেড়ে দিয়ে মাপবেন। নারীদের ৮০ সেন্টিমিটার ও পুরুষদের ৮০ সেন্টিমিটারের ওপর মাপ হলে বুঝতে হবে আপনার পেটে মেদ আছে।

গড়পড়তা যেটাকে মোটা বলে, সেটা হয়তো আপনি নন। কিন্তু শরীরে কোনো কোনো জায়গায় মেদ হয়তো একটু বেশিই, যা আপনার শারীরিক সৌন্দর্যে ব্যাঘাত ঘটায়। এসব ক্ষেত্রে ডায়েটে খুব একটা কাজ হয় না। এর পরিবর্তে ঘরে বসেই এমন কিছু ব্যায়াম করতে পারেন, যা আপনার শারীরিক গঠন সুন্দর করতে সাহায্য করবে।

সবচেয়ে কঠিন কাজ পেটের মেদ ঝরানো। হ্যাঁ, জিম করে সারা শরীরের মেদ ঝরিয়ে ফেললেও পেটের মেদ কমাতে সত্যিই নাজেহাল হয়ে যেতে হয়। নিয়মিত শরীরচর্চার পাশাপাশি পেটের মেদ কমানোর জন্য ঠিক মতো ডায়েটেরও প্রয়োজন আছে। কিন্তু পুরো ব্যাপারটাই বেশ সময়সাপেক্ষ। কিন্তু যদি কম সময়ে আর কম পরিশ্রমে এই অসাধ্য সাধন করা যায়? এই রকমই একটি ম্যাজিক জানে ব্যায়াম। এই ব্যায়াম গুলোরোজ করলে মাত্র ১০ দিনেই ঝরবে পেটের মেদ। ব্য শরীরচর্চাবিদের মস্তিষ্কপ্রসূত। তাঁর মতে, পেটের মেদ কমানোর পাশাপাশি পিঠ সোজা রাখা ও পিঠের ব্যথা কমানোর ক্ষেত্রেও কাজে লাগে এই ব্যায়াম। বছর দশেক আগে এই ব্যায়ামটি তিনি তৈরি করেন।

আসলে, পেটের মেদ বাড়ার কারণে আমাদের সৌন্দর্য ক্ষয় হয়। এছাড়াও, জামাকাপড় মানায় না এবং আত্মবিশ্বাস দুর্বল হতে শুরু করে। তবে, এবার থেকে পেটের মেদ ঝরাতে বিছানা থেকে উঠেই এই কয়েকটি ব্যায়াম করুন।

প্রথমে ১ মিনিট জগিং
তারপর ৩০ সেকেন্ড দৌড়ানো
তারপর আবার ১ মিনিট জগিং
৩০ সেকেন্ড দৌড়ানো
এভাবে ৫ মিনিট.তার পর ব্যায়াম করুন।

১। প্রথমে ধীরে ধীরে এক মিনিট হাঁটুন, তারপর গতি বাড়িয়ে জোরে ৪০ সেকেন্ড হাঁটুন। আবার ধীরে এক মিনিট হাঁটুন, আবার জোরে ৪০ সেকেন্ড। এভাবে থেকে ৫ মিনিট।

২। পা সোজা রাখুন। আস্তে আস্তে আপনার পা এবং বাহু উপরে দিকে উঠান এবং কোমর বাঁকুন। আপনার হাত পায়ের দিকে সরান এবং শরীরকে ভি-আকারে আনুন। এই ব্যায়াম সময় কেবল আপনার গোড়ালি বিছানায় থাকা উচিত। পা সোজা রাখুন এবং আপনার আঙ্গুলগুলি হাত দিয়ে স্পর্শ করুন। কয়েক সেকেন্ডের জন্য এই অবস্থানে থাকুন এবং তারপরে স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে আসুন। এটি আপার এবং লোয়ার অ্যাবস ব্যায়ামের জন্য উপকারী।

৩। চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন। দুই হাত সোজা করে মাথার পেছনে নিয়ে যান টানটান করে। একই সঙ্গে পায়ের পাতা টানটান করে মেঝে ছুঁতে চেষ্টা করুন। পেটের পেশিতে টান অনুভব করবেন এতে। এভাবে ৫ থেকে ১০ মিনিট থাকবেন। শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে।

৪। বিছানায় শুয়ে আপনার হাঁটু বাঁকুন। আপনার পা মেঝেতে এবং হাতগুলি মাথার পিছনে রাখুন। গদিতে নীচের অংশটি টিপুন এবং আপনার পেটের পেশী শক্ত রাখুন। আপনার মাথা, কাঁধ এবং বিছানা থেকে ব্যাক আপ করুন। আপনার ডান পা সোজা রাখুন এবং ডান কনুই এবং বাম হাঁটু একে অপরের দিকে সরান। তারপরে ডান হাঁটুকে পিছনে টানুন এবং বাম পা সোজা করুন এবং বাম কনুই এবং ডান হাঁটু একে অপরের দিকে সরিয়ে নিন। এই পদ্ধতি বারবার করুন।

৫। চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন । তারপর দুই হাত কোমরের নিচে রাখুন।এরপরে মস্তিস্ক, কাঁধ এবং পা নিচ থেকে আস্তে আস্তে ওপরের দিকে ওঠান।

৬। হাঁটু ভেঙে বজ্রাসনে বসুন। এবার দুহাত দুই হাঁটুর ওপর রাখুন। হাতের পাতা জোড় করে শ্বাস নিতে নিতে হাত দুটি ওপরে ওঠান।
এবার নিশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে শরীরকে সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে কপাল ও হাত দুটিকে মেঝেতে লাগান। এভাবে ৩০ সেকেন্ড থাকুন। ৩০ সেকেন্ড বিরতি দিয়ে এই ব্যায়ামটাই তিনবার করুন। উপকারিতা এই ব্যায়ামটি উচ্চতা বাড়াতে সাহায্য করে। পুরো শরীরে রক্ত সঞ্চালন করে। মনোযোগ বাড়ায়। হাতের পেশি টান টান করে।

৭। বিছানায় পুশ-আপ করার সময় আপনার কনুইগুলি ৯০ ডিগ্রিতে বাঁকুন। আপনার শরীরের বাকী ওজন আপনার বাহুতে রাখুন। কনুইগুলি সরাসরি আপনার কাঁধের নীচে থাকা উচিত। আপনার হাত শক্ত করে ধরুন। আপনার শরীরটি মাথা থেকে পা পর্যন্ত সোজা লাইনে থাকতে হবে তা মনে রাখবেন। ১০সেকেন্ডের জন্য এই অবস্থানে থাকুন এবং তারপরে শিথিল করুন। এটি বিশেষত পেটের পেশী এবং পিঠের নীচের অংশের জন্য ভালো।

৮। মাদুরে চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার হাঁটু ভাঁজ করে বুকের কাছে আনতে চেষ্টা করুন। একই সঙ্গে মাথার পেছনে হাত দিয়ে শরীরটাকে উঠিয়ে হাঁটুর কাছাকাছি নিয়ে যান। হাঁটু মাথা একসঙ্গে আনার সময় শ্বাস নেবেন, আগের অবস্থানে ফিরে যাওয়ার সময় শ্বাস ছেড়ে দেবেন। দিনে দুবেলা ১০ বার করুন।

৯। প্রথমেই মেঝেতে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার পা দুটি ভেঙে নিন। এরপর হাত দুটি ক্রস আকারে ভাঁজ করে নিন।
এবার নিশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে শরীরের উপরিভাগকে ওপরের দিকে এমনভাবে টেনে তুলুন, যাতে পেটে চাপ পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে আবার নামিয়ে নিন। খেয়াল রাখবেন, মাথার পেছনের দিক যেন মেঝেতে না লাগে। এভাবে গুনে গুনে দশবার করলে এক সেট হবে। এক মিনিট পরে আবার তিন সেট করুন।

উপকারিতা
পেট ও পিঠের উপরিভাগের মেদ কমাতে সাহায্য করে। একটু বয়স হয়ে গেলে শরীরে যে একটা থলথলে ভাব আসে, তা দূর হয়।

১০। বিছানায় শুয়ে আপনার পা সোজা এবং আপনার মাথা সরাসরি আপনার মাথার উপরে রাখুন। আপনার পায়ের আঙ্গুলগুলিতে পৌঁছানোর জন্য আলতো করে একটি বক্ররেখায় রোল করুন। কয়েক সেকেন্ডের জন্য এই অবস্থানে থাকুন। তারপরে শরীরকে প্রাথমিক অবস্থানে নিয়ে আসুন। আপনার যদি বিছানায় পা ধরে রাখতে সমস্যা হয় তবে আপনার পা গদিতে লাগান। আপনি উঠার পরে আপনার হাঁটু বাঁকতে পারেন। এই ব্যায়াম করার সময় বালিশও ব্যবহার করা যেতে পারে।

উপকারিতা

পেটের নিচের অংশের মেদ কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া কোমরের দুই পাশের মেদ কমিয়ে গঠন সুন্দর করতে সাহায্য করে।

১১ নং ব্যায়ামটির জন্য একটি মাঝারি আকারের তোয়ালে আর একটি যোগাসন করার মাদুরের প্রয়োজন। প্রথমে চিৎ হয়ে হাত ও পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার তোয়ালেটি ভাল করে মুড়ে নিয়ে কোমরের উপর রাখুন। চেষ্টা করবেন নাভির ঠিক তলায় রাখতে। এবার পা দুটো কাঁধের দূরত্বের সমান করুন। খেয়াল রাখুন পায়ের আঙুলগুলি যেন একে-অপরকে ছুঁয়ে থাকে। এবার মাথার উপরে হাতদুটো নিয়ে যান। হাতের তালু থাকবে নীচের দিকে। এই অবস্থায় কড়ে আঙুল দিয়ে মেঝেকে স্পর্শ করুন। মিনিটপাঁচেকের জন্য এই ভঙ্গিতে থাকুন। তারপর ধীরে ধীরে শরীর শিথিল করুন।

ছবি – সংগৃহীত

প্রতিবেদবন – নন্দিনী সরকার

আরও পড়ুন – Morning Walk : পায়ে পায়ে এগোনর উপকারিতা

আমাদের ফেসবুক পেজ – https://www.facebook.com/somoyasomoy.co